প্রবন্ধ রচনা : তোমার দেখা একটি মেলা
Answer:
ভূমিকা : মেলা শব্দটি শােনার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মনে আনন্দের অনুভূতি সৃষ্টি হয়। আক্ষরিকভাবে মেলা শব্দের অর্থ হলাে ‘মিলন'। মেলায় পরিচিতজনদের সঙ্গে দেখা হয় এবং ভাববিনিময় হয়। একের সঙ্গে অন্যের সংযােগ ঘটে মেলায়। আমাদের সংস্কৃতিতে মেলার গুরুত্ব অসীম। মেলার প্রচলন । অতি প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশে মেলার প্রচলন ছিল। তবে তখন মেলার আয়ােজন হতাে সুনির্দিষ্ট কিছু স্থানে এবং বৃহৎ পরিসরে। বর্তমানে দেশের প্রায় সব স্থানেই মেলা হয়। কোনাে কোনােটির আয়ােজন অনেক বড়, আবার কোনােটির ক্ষুদ্র। তবে মেলার আনন্দ এখন আগের মতােই রয়েছে।
মেলার স্থান : সাধারণত খােলা কোনাে বৃহৎ স্থানে, যেখানে মানুষের চলাচল রয়েছে, তেমন স্থানেই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। অনেক সময় স্কুলমাঠেও মেলা অনুষ্ঠিত হয়। তবে আমি যে মেলাটি দেখেছি, সেটি বসেছিল নদীর ধারের একটি বৃহৎ বটগাছের নিচে।
মেলার উপলক্ষ : আমাদের দেশে বেশির ভাগ মেলা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হয়। হিন্দুদের দুর্গাপূজা, রথযাত্রা, দোল উৎসব, জন্মাষ্টমী প্রভৃতি উপলক্ষে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মুসলমানদের ১০ই মহরমকে কেন্দ্র করে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বৌদ্ধদের বৌদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষেও মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া চৈত্রসংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। আমার দেখা মেলার উপলক্ষ ছিল পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ।
মেলার প্রস্তুতি : পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ বাঙালির সবচেয়ে আনন্দের দিন। এদিনকে উপলক্ষ করে মেলার প্রস্তুতিও ছিল বিশাল। অস্থায়ীভাবে বটগাছের চারদিকে দোকানপাট তৈরি করা হয়। একদিকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও যাত্রাপালার জন্য একটি বড় মঞ্চ তৈরি করা হয়। কিছু কিছু মানুষ মূল স্থানে জায়গা না। পেয়ে রাস্তার পাশে তাদের জিনিসপত্র নিয়ে বসার প্রস্তুতি নেয়। মঞ্চের চারদিকে মাইক লাগানাে হয়।
মেলার চিত্র : পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে মেলা শুরু হয়। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেলার সূচনা করেন। মেলা শুরু হতেই এতে জনস্রোত দেখা যায়। যে দোকানগুলাে কাল পর্যন্ত খালি ছিল তা আজ কানায় কানায় নানা দ্রব্যসামগ্রীতে ভরে যায়। মানুষ রঙিন পােশাক পরে মেলায় প্রবেশ করে। ছােট ছেলেমেয়েদের চোখেমুখে আনন্দের ঝলক দেখা যায়। বৃদ্ধরাও ভিড় এড়িয়ে মেলায় প্রবেশ করতে থাকে। মেলার চারদিকে প্রচণ্ড ভিড় লক্ষ করা যায়। প্রতিটি দোকানে মানুষ তাদের পছন্দের ও প্রয়ােজনের জিনিসপত্র কিনতে শুরু করে। ছােট ছেলেমেয়েরা ভিড় করে মাটির খেলনা, বেলুন, বাশি আরও নানা জিনিসের দোকানে। নারীরা ভিড় করে প্রসাধনসামগ্রী ও চুড়ির দোকানে। এ ছাড়া কাপড়ের দোকানেও ভিড় লক্ষ করা যায়। পুরুষেরা তাদের পােশাকের দোকানের সামনে ভিড় করে। মেলার এদিকে মিষ্টির দোকান লক্ষ করা যায়। এখানে গরম জিলিপি কিনতে সবাই ভিড় করে। এ ছাড়া ছােলাভাজা, বাদামভাজা, পাঁপরভাজা, ভুট্টার খই, কনক ধানের খই, মুড়কি, বাতাসা, হাওয়াই মিঠাই ও নানা রকমের মিষ্টি পাওয়া যায় মেলায়। সবাই এগুলাে খেতে খেতে মেলায় ঘুরে বেড়ায়। মেলার একদিকে একটি লােক সাপের খেলা। দেখাচ্ছিল তা দেখতে ভিড় করে অসংখ্য মানুষ। এছাড়া ছােটখাটো একটা সার্কাসের আয়ােজনও ছিল।
মেলার তাৎপর্য : মেলায় মানুষের সম্প্রীতির এক বন্ধন তৈরি হয়। স্থানীয়ভাবে তৈরি জিনিসের একটি প্রদর্শনী হয় মেলায়। মানুষ তার নিজস্ব সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারে মেলায় এসে। শুধু তাই নয়, এখানে অর্থনৈতিক বিষয়ও যুক্ত থাকে। একদল মানুষের উপার্জনের মূল উৎস হলাে মেলা। এ ছাড়া ক্রেতারাও তাদের প্রয়ােজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করার জন্য মেলার ওপর নির্ভর করে। অনেকে মেলাকে ঘিরে বছরের বিকিকিনির বড় পরিকল্পনাও করে থাকে।
মেলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান : সন্ধ্যার সময় মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়ােজন করা হয়। স্থানীয় শিল্পীদের গান পরিবেশনের পর শুরু হয় যাত্রাপালা। মঞ্চে ভেলুয়া সুন্দরীর পালা পরিবেশন করা হয়। যাত্রাপালায়। ভেলুয়া সুন্দরীর জীবনের দুঃখ দেখে অনেকেই আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। পরিশেষে সবাইকে ধন্যবাদ। জানিয়ে কর্তৃপক্ষ মেলার ইতি টানে।
উপসংহার : বাঙালি সংস্কৃতির বিরাট অংশজুড়ে রয়েছে মেলা। মেলা সাধারণ কোনাে আয়ােজন নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের প্রথা, ইতিহাস ও ঐতিহ্য। মেলার মধ্য দিয়ে একশ্রেণির জীবন ও জীবিকা গড়ে উঠেছে। শুধু গ্রামেই নয়, শহরেও মেলা আনন্দের উৎস। তাই তাে মেলার দিনে মানুষ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে। মানুষকে আনন্দদানের উদ্দেশ্যে সমবেত করতে মেলার কোনাে বিকল্প নেই। তাই তাে মেলা আজও আমাদের কাছে এত আকর্ষণীয়।
All Govt Exam Mock Test: Click HERE
Maddhamik Question Paper Solution : Click HERE
Bookmark our Website or Subscribe our website for more information web.bjubangla.in
