বাংলায় ছাপাখানার বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য্যের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।
Answer:
ভূমিকা: বাংলা তথা ভারতের একজন প্রকাশক মুদ্রণ-শিল্পবিদ, পুস্তক ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকতার পথ প্রদর্শক রূপে বাঙালি গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের ভূমিকা বিশেষ স্মরণীয়।
(A) কর্মজীবন: শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশনারি প্রেসের একজন কম্পোজিটার রূপে তিনি তার কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি শ্রীরামপুর মিশন প্রেস ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন এবং ফরিস অ্যান্ড কোম্পানি প্রেসে যোগদান করেন, এখানে থাকাকালীন তিনি বইয়ের ব্যাবসাও শুরু করেন।
(B) বাঙ্গাল গেজেটি প্রেস স্থাপন: 1818 খ্রিস্টাব্দে হরচন্দ্র রায়ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তিনি কলকাতার চোরবাগান স্ট্রিটে বাঙ্গালা গেজেট নামে একটি প্রেস স্থাপন করেন। সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে এই প্রেসটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
(C) প্রকাশিত গ্রন্থ: এই প্রেস থেকে নিজের লেখা বিভিন্ন গ্রন্থ যেমন বাংলা গ্রামার, ইংরেজি গ্রামার ছাড়াও 'গঙ্গাভক্তিতরঙ্গিনী, লক্ষ্মীচরিত', 'বেতাল পঞ্চবিংশতি চাণক্য শ্লোক প্রভৃতি প্রকাশিত হয়। এই প্রেস থেকেই তৎকালীন সাড়া জাগানো প্রথম বাংলা সচিত্র গ্রন্থ ভারতচন্দ্রের 'অন্নদামঙ্গল' কাব্য প্রকাশিত হয়।
(D) সংবাদপত্র-সাময়িক পত্র প্রকাশনা: প্রথম বাঙালি সাংবাদিক হিসেবে বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দেন। তার উদ্যোগে 'বাঙ্গাল গেজেটি প্রেস থেকে 1818 খ্রিস্টাব্দে 16 মে প্রথম প্রকাশিত হয় 'বাঙ্গালা গেজেটি নামক পত্রিকা। দেশীয় উদ্যোগে তিনিই সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র প্রকাশনার পথপ্রদর্শক ছিলেন। রামমোহন রায়ের সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে বিভিন্ন লেখা এখানে প্রকাশিত হয়।
(E) পুস্তক বিক্রেতা: পুস্তক বিক্রেতা রূপেও তিনি বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দান করেন। তিনিই ছিলেন প্রথম বাঙালি পুস্তক বিক্রেতা। সেই সময় শিক্ষার বিস্তার ও ছাপাখানার প্রসার ঘটলে তার দেখাদেখি অন্যান্য বাঙালিও পুস্তক ব্যাবসার কাজে লিপ্ত হয়।
উপসংহার: শেষ জীবনে তিনি কলকাতা ছেড়ে জন্মস্থানে ফিরে গেলেও সেখান থেকেই মুদ্রণ, প্রকাশনা ইত্যাদির কাজ চালিয়ে যান। তার হাত ধরেই মুদ্রণ, প্রকাশনা, পুস্তক ব্যাবসা, সংবাদ প্রকাশনা ইত্যাদির বিশেষ রূপ অগ্রগতি ঘটে। সমসাময়িক পত্রিকা 'সমাচার দর্পণ' ইত্যাদিতে তার সম্বন্ধে উচ্ছ্বসিত প্রশংসাও করা হয়।